এমপি কমলের সাথে বৈঠক :
প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
গত ১৭ এপ্রিল কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ইন্টার্ণী ডাক্তার কর্তৃক তালা লাগিয়ে সৃষ্ট অনাকাঙ্খিত ঘটনার প্রেক্ষিতে ২৯ এপ্রিল হরতাল সহ ঘোষিত কর্মসুচি নিয়ে একটি বৈঠক স্থানীয় সংসদ সদস্যের আহবানে কক্সবাজার হিলডাউন সার্কিট হাউসে ‘‘আমরা কক্সবাজারবাসী’’ নেতৃবৃন্দের সাথে অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত উক্ত বৈঠকে কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য ও কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সায়মুম সরওয়ার কমল ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও পৌর কাউন্সিলার হেলাল উদ্দিন কবির ও কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য রোস্তম আলী। ‘‘আমরা কক্সবাজারবাসী’’ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কক্সবাজার জেলা সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দীন, কমরেড সমীর পাল, ঐক্য ন্যাপ এর আহবায়ক রবিন্দ্র বিজয় বড়ুয়া, হেমন্তিকা শিল্পীগোষ্ঠীর পরিচালক অনিল দত্ত, শহর জাপার সাধারন সম্পাদক যুবনেতা নাজিম উদ্দীন, তেল-গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটির জেলা সদস্য সচিব কলিম উল্লাহ, দি কক্সবাজার ম্যাসেজ ডটকম এর নির্বাহী সম্পাদক ও বার্তা প্রধান এম.ইউ.আর মাসুদ, সাবেক ছাত্রনেতা ও সাংবাদিক ওয়াহিদুজ্জামান রুবেল, ব্যবসায়ী উজ্জল সেন, কক্সবাজার জেলা সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সদস্য মনছুরুল হক, ছালেহ আহাম্মেদ, এশিয়ান টিভির কক্সবাজার প্রতিনিধি মোহাম্মদ শফিক প্রমুখ।

বৈঠকে গত ১৭ই আগষ্ট আহত মোহাম্মদ হোসেন এর স্বজন ও ইন্টার্ণী ডাক্তারদের মধ্যে সংগঠিত অনাকাঙ্খিত ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়। নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ১৭ এপ্রিল সকালে কলাতলীতে আগুন লেগে ৩ টি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে যায় । মুহাম্মদ হোছন আগুন নিভাতে গিয়ে মারাত্মক আঘাত প্রাপ্ত হয় । স্বজনরা মুহাম্মদ হোছনকে দ্রুত সদর হাসাপাতালে নিয়ে আসে । সদর হাসাপাতালে কর্মরত ইন্টার্ণী চিকিৎসকরা মারাত্মক আহত রোগীকে চিকিৎসা দিতে চরম অবহেলা করে । অবহেলার কারণ জানতে চাইলে ইন্টার্ণী চিকিৎসকরা  এই রোগীকে সহ রোগীর সাথে থাকা আরো একজন আহত ব্যক্তিকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। রোগীর সাথে থাকা অন্যরা আহত রোগীদের নিয়ে অন্যত্র চিকিৎসার জন্য চলে যায়। রোগীকে দেখতে আসা লোকজন ঘটনা শুনে ইন্টার্ণী চিকিৎসকদের সাথে হট্টগোল করে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী ও রোগীর স্বজনরা। এই ঘটনায় ইন্টার্ণী চিকিৎসকরা সদর হাসপাতালের সকল গেইটে তালা লাগিয়ে কক্সবাজারের প্রশাসনকে জিম্মি করে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে । যার ১ নং আসামী পরের উপকার করতে গিয়ে মারাত্মক আহত মুহাম্মদ হোছন ১০ দিন ধরে বিনা চিবিৎসায় কারাগারে রয়েছে। ২২ এপ্রিল তাকে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে । ইতোমধ্যেই ডাক্তাররা ইন্টার্ণী ডাক্তারদেরকে গুরুতর আহত দেখিয়ে আদালতে মিথ্যা সার্টিফিকেট দাখিল করেছে।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যখন হরতাল/অবরোধের ডাক দেয় তখন হাসপাতাল সহ কিছু সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সব কর্মসূচীর বাইরে থাকে। কিন্তু সেই রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ জনসেবা মূলক প্রতিষ্ঠান হাসপাতালে তালা দিয়ে ইন্টার্ণী ডাক্তাররা কক্সবাজারের জনগণ ও প্রশাসনকে জিম্মি করেছে।

এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার পূর্বক আহত ব্যক্তিকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসা প্রদান, হাসপাতালে তালা লাগিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির তদন্ত পূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানোগ ব্যবস্থা গ্রহণ, মিথ্যা মামলা দায়েরকারী ও সার্টিফিকেট প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ, সর্বোপরী সৃষ্ট ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত পূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যা থেকে ৫০০ শয্যা উন্নীত করণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ করে দ্রুত ৫০০ শয্যার উন্নয়ন কাজ আরম্ভ করা, সার্বক্ষণিক হাসপাতালের চিকিৎসার সু-ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, বন্ধ আই.সি.ও বিভাগটি চালু করা, সর্বোপরী সদর হাসপাতালের ইন্টার্ণী ডাক্তার সহ সকল ডাক্তার কর্মচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন সুনিশ্চিত করার দাবি জানান।

সভায় ‘‘আমরা কক্সবাজারবাসী’’ নেতৃবৃন্দ সাংসদকে ১৮টি দাবী উপস্থাপন করেন। দাবীগুলো হল : ১৭ই এপ্রিল কক্সবাজার সদর হাসপাতালে তালা লাগিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষি ব্যক্তিদের বিরোদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার পূর্বক অসুস্থ রোগীকে মুক্তি দিয়ে সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। ঘটনায় ইন্টার্ণী ডাক্তারকে আহত দেখিয়ে মিথ্যা সার্টিফিকেট প্রদানের তদন্ত পূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও সার্টিফিকেট প্রত্যাহার করা। ঘটনার প্রতিবাদকারী সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিত, মানহানিকর, মনগড়া, মিথ্যা এবং আপত্তিকর ফেইসবুক স্ট্যাটাস প্রদান ও সংবাদ প্রকাশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। হাসপাতালে জরুরী বিভাগ, বহির্বিভাগ ও ভর্তি রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সুনিশ্চিত করা। হাসপাতালের শৌচাগার, হাসপাতাল প্রাঙ্গন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। ডাক্তার, নার্স, ইন্টার্ণী ডাক্তার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডিউটি সুনিশ্চিত করা। হাসপাতালে অচল যন্ত্রপাতি সচল করা। সরকারী সরবরাহকৃত সকল ঔষুধ রোগীদের বিনামূল্যে প্রদানের ব্যবস্থা করা। খাবার ও সুপেয় পানির সু-ব্যবস্থা করা। ২৪ ঘন্টা লিফ্ট চালু রাখার ব্যবস্থা করা। সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশ থেকে লাশকাটা ঘর সরিয়ে অন্যত্র স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা। সদর হাসপাতালের জন্য বরাদ্দকৃত দেশী-বিদেশী অনুদানের অর্থ যথাযথ ব্যয় নিশ্চিত করা, অন্যত্র বরাদ্দ হস্তান্তরের চেষ্টা বন্ধ করা।

সাংসদ নেতৃবৃন্দকে সকল যৌক্তিক দাবী সংশ্লিষ্টের সাথে আলাপ আলোচনা করে যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। সাংসদের আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে নেতৃবৃন্দ ২৯ এপ্রিলের হরতাল সহ সকল কর্মসূচী স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে দাবী-দাওয়া পূরণ না হলে হরতালসহ নতুন কর্মসূচী দেওয়া হবে বলে নেতৃবৃন্দ জানান।